ক্যারিয়ার টিপস-২ঃ (ভালো সিভি খারাপ সিভি)

ক্যারিয়ার টিপস-২ঃ (ভালো সিভি খারাপ সিভি)

বায়োডাটা, সিভি বা রিজ্যুমি;

এই তিনটাই জীবন বৃত্তান্ত। তবে চাকরির ধরন আর উপস্থাপনা কৌশল ভেদে কোথাও বায়োডাটা, কোথাও সিভি, আবার কোথাও রিজ্যুমি পাঠাতে হয়। যেমনঃ সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সাধারণত বায়োডাটা (biodata) সাবমিট করতে হয়। কিন্তু জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক জব মার্কেটে এপ্লাই করতে সাধারণত রিজুমি (resume) অথবা সিভি (CV) চাওয়া হয়ে থাকে। বায়োডাটাতে ক্যান্ডিডেটের জন্ম তারিখ, লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ, জাতীয়তা, ঠিকানা, বৈবাহিক অবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে আগে লেখা হয় এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পেশাগত অভিজ্ঞতা পরে ধারাবাহিকভাবে লেখা হয়ে থাকে।


আবার সিভি বা কারিকুলাম (curriculum vitae) ভাইটা একটি ল্যাটিন শব্দ, যার অর্থ কোর্স অফ লাইফ বা জীবন বৃত্তান্ত। এতে সাধারণত একজন ক্যান্ডিডেটের জেনারেল ট্যালেন্ট বা সহজাত যোগ্যতা হাইলাইট করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। তাই সিভির আকার বায়োডাটার চেয়ে ছোট কিন্তু রিজ্যুমির চেয়ে আকারে বড় হয়ে থাকে (সাধারণত দুই থেকে তিন পৃষ্ঠা)। সিভিতে ক্যান্ডিডেটের সকল স্কিল, পেশাগত অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অন্যান্য অর্জনসমূহ ধারাবাহিক ভাবে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে।
আর ‘রিজ্যুমি’ একটা ফ্রেঞ্চ শব্দ, এর মানে ‘সামারি’ সারসংক্ষেপ। নির্দিষ্ট জবের কথা মাথায় রেখে প্রার্থীর স্পেসিফিক স্কিলগুলোকে হাইলাইট করে রিজুমি প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। তাই একেকটা রিজুমি সর্বোচ্চ এক থেকে দুই পাতা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ভালো রিজুমির শুরুতেই ক্যান্ডিডেটের একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া থাকে। তারপর কোয়ালিফিকেশন এর সামারি আর পেশাগত অভিজ্ঞতা বর্ণনা দেয়া থাকে। এক্ষেত্রে সর্বশেষ পেশাগত অভিজ্ঞতার বিস্তারিত বর্ণনা দিতে হয় আর এর আগের পেশাগত অভিজ্ঞতা গুলো সংক্ষেপে লিখতে হয়। সবার শেষে থাকে শিক্ষাগত যোগ্যতার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।
অভিজ্ঞ একজন প্রার্থী যখন নির্দিষ্ট কোন পজিশন এর জন্য এপ্লাই করে থাকেন যেখানে নির্দিষ্ট স্কিল থাকা জরুরি, সেসব ক্ষেত্রে সাধারণত রিজুমি সাবমিট করা হয়ে থাকে। অন্যদিকে ফ্রেশ গ্রাজুয়েট অথবা পেশা পরিবর্তন করতে আগ্রহীদের ক্ষেত্রে প্রধানত সিভিই সাবমিট করা হয়ে থাকে। আবার ইউরোপিয়ান কোম্পানিতে এপ্লাই করার সময় সিভি আর আমেরিকান কোম্পানির ক্ষেত্রে রিজ্যুমি সাবমিট করার চল আছে। তবে আমরা জানার চেষ্টা করব কিভাবে ভালো সিভি তৈরি করা যায়, সে বিষয়ে।

কেন ভালো সিভি এতো গুরুত্বপূর্নঃ

কারন একজন রিক্রুটার আপনার সিভি দেখতে গড়ে ৬ সেকেন্ড সময় নেন। জ্বি, ৬ সেকেন্ড মাত্র! আপনি নিজেই ভেবে দেখুন একটা পোস্টের জন্য যখন ৩০০ সিভি আসে তখন আপনি রিক্রুটার হলে আপনি কি বসে বসে সব কয়টা সিভি লাইন বাই লাইন পড়তেন? না, তাই না? 
তার মানে, এই ৬ সেকেন্ডের ভেতরই আপনাকে রিক্রুটারের নজর কাড়তে হবে। কিন্তু কিভাবে নজর কাড়বেন? আপনি তো আর সামনে নেই, আছে আপনার সবেধন নীলমণি সিভি। তাই বোঝার চেষ্টা করেন, সিভিই হল আপনার নিজের ব্যাপারে ভালো ইম্প্রেশন তৈরি করার প্রথম ধাপ। আপনার সিভি যত পরিচ্ছন্ন আর অর্গানাইজড হবে, ততই রিক্রুটার আপনার সিভি পড়ার ব্যাপারে আগ্রহী হবেন। আর রিক্রুটার আগ্রহী মানেই ইন্টারভিউ তে ডাক পরার চান্স বেড়ে যাওয়া! তাই সিভি প্রস্তুতির পেছনে কোয়ালিটি সময় দিন। নিশ্চিত করুন আপনার সিভিতে যেন আপনার স্কিল, এক্সপার্টিজ আর মূল্যবোধ যথাযথভাবে হাইলাইটেড হয়। একই সাথে খেয়াল রাখুন সিভি যেন সংক্ষিপ্ত আর নির্ভুল হয়। আপনি যে জবের জন্য সিভি বানাবেন, সিভিতে যেন সেই জবের সাথে প্রাসঙ্গিক কোয়ালিফিকেশন আর স্কিলগুলো প্রাধান্য পায়। কারন আপনার এমপ্লয়ার আপনার সিভিতে এসবই খুঁজবেন!

সিভিতে কী খুঁজে তারা?

#ব্যাক্তিগত তথ্যাদিঃ আপনার নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ইমেইল এড্রেস ইত্যাদি। চাইলে আপনার লিঙ্গ, জাতীয়তা, বৈবাহিক অবস্থা আর জন্ম তারিখও দিতে পারেন। কিন্তু এসব দেয়া বাধ্যতামূলক না।
#ব্যাক্তিগত প্রোফাইলঃ এটা দেয়া অপশনাল। তবে বুদ্ধিমত্তার সাথে বানাতে পারলে এই অংশে আপনার দক্ষতা আর যোগ্যতার একটি সংক্ষিপ্তসার উপস্থাপন করা সম্ভব। কোনো নির্দিস্ট জবের জন্য নিজের মোটিভেশন জানাবারও জায়াগা এটি। তবে এক্ষেত্রে ব্যাপারটা সংক্ষিপ্ত আর টু দ্য পয়েন্ট রাখুন। 
#প্রধান স্কিলস বা দক্ষতা সমুহঃ নিজের যাবতীয় হার্ড আর সফট স্কিল গুলো এখানে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। 
#পেশাগত ইতিহাসঃ পেশাগত ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে সবার আগে বর্তমান অথবা সর্বশেষ পেশার কথা লিখতে হয়। এতে আপনার ইতোপূর্বে করা প্রত্যেকটি চাকরির সময়কাল, জব টাইটেল, এমপ্লয়ারের নাম, কাজের বিবরন আর আপনার অর্জন (যদি থাকে) সমুহ উল্লেখ করতে হয়।
#শিক্ষা এবং অন্যান্য কোয়ালিফিকেশনঃ আপনার এস এস সি, এইচ এস সি, অনার্স, মাস্টার্স সহ সকল শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রতিষ্ঠানের নাম, পাশের সাল এবং ফলাফল সহ লিখুন। এরপর অন্যকোনো কোর্স, ট্রেনিং কিংবা কোয়ালিফিকেশন থাকলে তা সংক্ষেপে লিখুন।
#ইন্টারেস্ট বা শখঃ এটাও অপশনাল। দিতে চাইলে দিতে পারেন তবে সংক্ষেপে সেরে নিন। শখের কাজে যদি কোনো বিশেষ অর্জন থাকে তা উল্লেখ করুন।
#রেফারেন্সেসঃ সিভিতে আপনার রেফারির (এমন কেউ, যাকে জিজ্ঞেস করলে আপনার ব্যাপারে তিনি ভালো ভালো কথা বলবেন) বিস্তারিত না দিলেও চলে। হয় আপনি বলতে পারেন যে চাইলে আপনি তাদের বিস্তারিত দিয়ে পারবেন (available on request) কিংবা শুধু তাদের নাম, ইমেইল এড্রেস আর ফোন নম্বর দিতে পারেন। অবশ্যই যার নাম দিচ্ছেন তাকে জানিয়ে রাখবেন।

★ভালো মানের কাগজ ব্যবহার করুন। এইটা একটা ইম্প্রেশনের মামলা, ইয়াদ রাখবেন।
★লেখা ইতিবাচক, নির্ভুল, পরিস্কার আর সংক্ষিপ্ত হতে হবে।
★হেডিং গুলো যেন পরিস্কার বোঝা যায় আর চোখে পইরে।
★বড় বড় প্যারাগ্রাফ না লিখে বুলেট ফর্মে লিখুন।
★লেখার ফন্ট সিলেকশনে সতর্ক হোন। এরিয়াল, তাইম নিউজ রোমান, বুকমেন ওল্ড স্টাইল ইত্যাদি কমন ফন্ট ব্যবহার করা নিরাপদ। 
★হেডিং এর ক্ষেত্রে সমতা বজায় রাখুন আর তারিখ লেখার ক্ষেত্রে একই ফরম্যাট ব্যবহার করুন।
★মেইলে পাঠানো সিভির ক্ষেত্রে কালারফুল গ্রাফিক্স পরিহার করুন। ওদের অফিস কিন্তু সাদাকালো প্রিন্টই করবে। 
★ প্রয়োজনীয় ফাকা জায়গা (হোয়াইট স্পেস) রাখবেন যেন পড়তে সুবিধা হয়।
★সিভির সাথে ছবি দেয়া মাস্ট না । আর দিলেও ফর্মাল ছবি দেবেন।
★ফাইনালি, ইমেইলে সিভি পাঠানোর আগে চেক করে দেখুন পিডিএফ চেয়েছে না ওয়ার্ড ডকুমেন্ট চেয়েছে। বড় বড় ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটাররা নিজেদের কাজের সুবিধার্থে এপ্লিকেশন ট্র্যাকিং সিস্টেম সফটওয়্যারের মাধ্যমে সিভি যাচাই করে নেয়। এ আরেক মজার জিনিস। সেই সফটওয়্যারের ফারা কাটাতে কী করতে হয় তা নিয়ে আরেকদিন আলোচনা করব। আজ আপাতত এখানেই শেষ করছি। 


পরের কিস্তিতে আমরা শিখব কিভাবে দারুণ করে সিভি বানাতে হয়
Rashed ICT- র সাথেই থাকুন .....................
লিখেছেন: দেলোয়ার হোসেন খান।
সংগ্রহিত লেখাটির লিংক: http://bit.ly/2SnLIdw
R @ S. Theme images by PLAINVIEW. Powered by Blogger.