আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি: ৪৪তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি: ৪৪তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি
বিসিএস প্রিলিমিনারি পাসের পর লিখিত পরীক্ষা হয়ে থাকে। প্রিলিমিনারিতে যাঁরা উত্তীর্ণ হন, তাঁরাই লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিসিএস লিখিত প্রস্তুতির বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ তুলে ধরা হলো। আজ থাকছে চতুর্থ পর্ব:
৪৪তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা অতি সন্নিকটে। বিসিএস আন্তর্জাতিক লিখিত পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়ে থাকে। ভালোভাবে প্রস্তুতি নিলে এবং একটু কৌশলী হলে এ অংশে ভালো নম্বর তোলা সম্ভব। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে ভালো করতে পত্রিকা পড়া অপরিহার্য। সাম্প্রতিক আলোচ্য বিষয়ে অবশ্যই ধারণা রাখতে হবে। টোটাল সময় ৩ ঘণ্টা। পরীক্ষা হয়ে থাকে ১০০ নম্বরের। প্রতি নম্বরের জন্য প্রায় ১.৮ মিনিট সময় পাবেন।
এ পরীক্ষায় ৩টি সেকশন থাকে।
ধারণাগত বিষয়াবলি
এই অংশে ৪০ নম্বর থাকে। ১০টি প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। মাঝেমধ্যে অতিরিক্ত প্রশ্ন থাকে। আবার অনেক সময় থাকে না। ১০টি প্রশ্ন উত্তর করার জন্য আপনি প্রায় ৭২ মিনিটের মতো সময় পাবেন। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরের জন্য প্রায় ৭.২ মিনিটের মতো। এখানে প্রশ্নোত্তর অতিরিক্ত বড় না করাই ভালো। ‘To the point’ উত্তর লিখবেন। অযথা ভূমিকা না দিয়ে সরাসরি উত্তরে চলে যাবেন। এখানে প্রামাণ্য সংজ্ঞা, উদাহরণ ও চিত্র নম্বর বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কোনো প্রশ্নোত্তর না পারলেও নিজের ধারণা দিয়ে লিখে দিয়ে আসবেন। কোনোভাবেই উত্তর ছেড়ে আসা যাবে না। এ অংশে সাধারণত ফিক্সড ইনফরমেশন এবং সাম্প্রতিক আলোচ্য বিষয়ের সঙ্গে রিলেটেড প্রশ্ন হয়ে থাকে। এ অংশে সম্প্রতি কিছু আনকমন প্রশ্নও হয়ে থাকে। এ জন্য সাম্প্রতিক আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে পত্রপত্রিকায় যেসব টার্ম ব্যবহার করা হয়, সেগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখার চেষ্টা করবেন। বিগত বিসিএসের প্রশ্নগুলো প্রথমেই সমাধান করে ফেলবেন। বিগত কয়েকটি বিসিএসের প্রশ্ন অ্যানালাইসিস করলে দেখা যায় ৭টি চ্যাপ্টারের মধ্যে Actors in the world, Power and Security, International Economic Relations ৩টি চ্যাপ্টার থেকে বেশি প্রশ্ন হয়ে থাকে। এই চ্যাপ্টারগুলো ভালো করে পড়ে, তারপর অন্য চ্যাপ্টারগুলো পড়বেন। এই অংশে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো: আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, সভ্যতার সংকট, গ্লোবাল অ্যাক্টর, স্টেট অ্যাক্টর, নন-স্টেট অ্যাক্টর, এমএনসি এবং এনজিও, আধুনিক রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের প্রকারভেদ, সার্বভৌমত্ব, Most Favoured Nations, বৈশ্বিক সম্পদ, সর্বজনীন মানবাধিকার সনদ, ক্ষমতা, হার্ড পাওয়ার, সফট পাওয়ার, জাতীয় ক্ষমতা, ব্যালেন্স অব পাওয়ার, নিরস্ত্রীকরণ, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, R2P, ভূ-রাজনীতি, ন্যাটো ও ইইউর এক্সপানশন, ভূরাজনীতি, জিও-অর্থনীতি, রিজিওনালিজম, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসবাদের প্রকৃতি, ব্যালান্স অব টেরর, কালেকটিভ সিকিউরিটি, নিউক্লিয়ার ডেটারেন্স, নিউক্লিয়ার প্রলিফারেশন, অস্ত্র চুক্তি, জাতীয়তাবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও নব্য উপনিবেশবাদ, বিশ্বায়ন, নয়া বিশ্বব্যবস্থা, লিবারেলিজম এবং নিও-লিবারেলিজম, ইমপেরিয়ালিজম বনাম কলোনিয়ালিজম, মডার্নিজম, পোস্ট-মডার্নিজম, পররাষ্ট্রনীতি ও কূটনীতি, বিভিন্ন ধরনের কূটনীতি, অনাক্রম্য এবং বিশেষাধিকার, কূটনৈতিক কার্যাবলি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, মুক্তবাণিজ্য, সুরক্ষা, বৈদেশিক সাহায্য, ঋণসংকট, সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই), ফিন্যান্সিয়াল লিবারেলাইজেশন, রিজিওনালিজম, রিজিওনালাইজেশন, নর্থ সাউথ গ্যাপ, ব্যালেন্স অব ট্রেড, ট্রেড ব্লক, WTO, বৈশ্বিক দারিদ্র্য, পরিবেশগত সমস্যা চ্যালেঞ্জ, জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণতা, জলবায়ু অভিযোজন, জলবায়ু কূটনীতি, গ্রিন ইকোনমি এবং সিভিল সোসাইটি ইত্যাদি।
গবেষণামূলক বিষয়াবলি
এ অংশে ৪৫ নম্বর থাকে। ৪টির মধ্যে ৩টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। প্রতিটি প্রশ্নে ২৭ মিনিট করে টোটাল ৮১ মিনিটের মতো সময় পাওয়া যায়। এখানে সাধারণত সাম্প্রতিক ইস্যু থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে। তাই সব সাম্প্রতিক বিষয়াবলি সম্পর্কে ক্লিয়ার কনসেপ্ট থাকা দরকার। প্রশ্নোত্তরের প্রথমেই রিলেটেড একটি কোটেশন দিয়ে উত্তর শুরু করতে পারেন। উত্তরগুলো কয়েকটি ধাপে লিখবেন। ভূমিকা বা প্রেক্ষাপট দিয়ে শুরু করতে পারেন। উত্তরে প্রাসঙ্গিক ম্যাপ, ডেটা, চার্ট, কোটেশন দিতে পারলে আপনার নম্বর বেড়ে যাবে। রিলেটেড আন্তর্জাতিক চুক্তি বা কনভেনশন অ্যাড করে দিতে পারেন। এই অংশে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো: জাতিসংঘ, নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার, শান্তিরক্ষী মিশন, বাংলাদেশের আইএমএফ লোন, এসডিজি, সার্কের বিকল্প হিসেবে BIMSTEC, AUKUS, QUAD, আইএমএফের বিকল্প হিসেবে NDB, রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট, আফগানিস্তান সংকট, ফিলিস্তিন সংকট, সিরিয়া সংকট, তাইওয়ান সংকট, রোহিঙ্গা সংকট, OIC-এর ব্যর্থতা, ইসরায়েলের সঙ্গে আরব বিশ্বের সম্পর্ক, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, চীন, মিয়ানমার ও জাপানের সম্পর্ক, চীন-ভারত সম্পর্ক, চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক, বেল্ট অ্যান্ড ইনিশিয়েটিভ রোড, চীনের ঋণের ফাঁদ, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনৈতিক কূটনীতি ইত্যাদি।
সমস্যার সমাধান
এই অংশে ১৫ নম্বর থাকে। সমসাময়িক একটি সমস্যা তুলে দিয়ে, সেটি সমাধানে সুপারিশ করতে বলা হয় অথবা একটি নীতিপত্র তৈরি করতে বলা হয়। এটি উত্তরের সময় প্রথমে সমস্যার প্রেক্ষাপট, সমস্যা, সমস্যার কারণে সৃষ্ট প্রভাব এবং সমস্যা সমাধানের সুপারিশ করবেন। সঙ্গে এই রিলেটেড আন্তর্জাতিক চুক্তি বা কনভেনশন অ্যাড করে দিতে পারেন। এতে উত্তরের সৌন্দর্য বেড়ে যাবে। এই উত্তরেও প্রাসঙ্গিক ম্যাপ, ডেটা, চার্ট, কোটেশন দিতে পারলে আপনার নম্বর বেড়ে যাবে। নীতিপত্র উত্তরের ক্ষেত্রে ওপরে মাঝের দিকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লিখবেন। নিচে বামে স্মারক নম্বর, ডানে তারিখ দেবেন। এরপর বিষয় লিখবেন। তারপর মূল কথাগুলো লিখে শেষে আপনার পরিচয় দিয়ে শেষ করে দেবেন। আপনি একজন ডিপ্লোম্যাট হিসেবে নীতিপত্র লিখবেন। তাই এখানে অতিরঞ্জিত কথাবার্তা না বলাই শ্রেয়।
মূল কথা লেখার সময় প্রেক্ষাপট, সমস্যা, সমস্যার প্রভাব, সমস্যা সমাধানে সুপারিশ, আন্তর্জাতিক চুক্তি বা কনভেনশন এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রনীতির বিষয়গুলো রাখার চেষ্টা করবেন। এই অংশে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে উত্তরণ, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও উত্তরণ, র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ, ভ্যাকসিন কূটনীতি, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি, অর্জন ও চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি।
- লক্ষণীয় কিছু বিষয়:সময়ের ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকবেন।
- সম্পূর্ণ উত্তর করে আসবেন। কোনো নম্বর ছেড়ে আসা যাবে না।
- নিয়মিত পত্রিকা পড়বেন। পত্রিকা পড়তে না পারলে পত্রিকার সম্পাদকীয় লেখাগুলো একসঙ্গে কম্পাইল করা কিছু বই পাওয়া যায়, সেগুলো দেখতে পারেন।
- ইউটিউবে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির প্রচুর কনটেন্ট পাওয়া যায়। এগুলো দেখতে পারেন। লেখার মতো রিসোর্স পেয়ে যাবেন।
- প্রাসঙ্গিক ডেটা, চার্ট, কোটেশন, ম্যাপ, আন্তর্জাতিক চুক্তি বা কনভেনশন ব্যবহারের চেষ্টা করবেন।
- হাতে সময় খুবই কম। প্রস্তুতি যেমনই হোক, শেষ সময়টা কাজে লাগানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন।
অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম